কোভিড সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতি সপ্তাহে দু’দিন করে রাজ্যে সার্বিক লকডাউন করার পথে হেঁটেছে রাজ্য সরকার। চলতি সপ্তাহে বৃহস্পতি এবং শনিবার সার্বিক লকডাউন হয়েছে। আগামী সপ্তাহে বুধবার একটি লকডাউনের দিন স্থির রয়েছে। সরকার জানিয়েছিল, আগামিকাল, সোমবার বৈঠক করে দ্বিতীয় দিনের ঘোষণা করা হবে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ভিডিয়ো বৈঠক থাকায় ওই বৈঠক না-হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে প্রশাসনিক সূত্রের ধারণা, ওই সপ্তাহে দ্বিতীয় কোনও লকডাউন-দিনের ঘোষণা শেষ পর্যন্ত না-ও হতে পারে। কারণ, ওই সপ্তাহে একটি ছুটির দিন রয়েছে বকরিদের জন্য। যে-হেতু ছুটির দিনে গতিবিধি বিশেষ থাকে না, সেই কারণে তার পরের সপ্তাহে দু’দিন লকডাউনের ঘোষণা করতে পারে সরকার।
এ দিন কলকাতার রাস্তাঘাট মোটের উপর শুনশান ছিল। অনিয়ম দেখলেই ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। এ দিন সকাল থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত লকডাউন নিয়ম বিধি না-মানার জন্য গ্রেফতার হয়েছেন ৭০৩ জন। মাস্ক না-পরার জন্য মামলা করা হয়েছে ৩৬৮ জনের বিরুদ্ধে। রাস্তায় থুতু ফেলার জন্য মামলা হয়েছে ১১ জনের বিরুদ্ধে। অপ্রয়োজনে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরোনোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ১৪টি গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে। ইএম বাইপাসের দু’জায়গায় লকডাউন বিধি অমান্য করে রাস্তায় বার হওয়া গাড়ি এবং মোটরবাইক আটকাতে গিয়ে জখম হয়েছেন দু’জন পুলিশকর্মী। তবে শহরের কয়েকটি এলাকায় গলিতে এ দিন ক্রিকেট খেলা বা আড্ডা চোখে পড়েছে।
বিভিন্ন জেলাতেও লকডাউন মোটের উপর সফল হলেও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত নিয়ম না-মানার প্রবণতা চোখে পড়েছে। যেমন বাঁকুড়া শহরের আশ্রমপাড়ায় সকালে গাছতলায় জমিয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন জনা বারো লোক। পুলিশের টহলদারি গাড়ি হাজির হওয়ায় ফাঁকা হয়ে যায় গাছতলা। আবার মালদহের ইংরেজবাজার শহরের বিশ্বনাথ মোড়ে এ দিন সকালে তখন মাইক হাতে লকডাউনে ঘরে থাকার কথা ঘোষণা করছিলেন আইসি মদনমোহন রায়। হঠাৎ দেখা যায়, ভ্যানের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন এক যুবক। লকডাউনে বাইরে কেন? সাইকেল-আরোহীর জবাব, ‘‘ওষুধ কিনে বাড়ি ফিরছি।’’ তবে তল্লাশি করে তাঁর পকেট থেকে ওষুধের বদলে দু’প্যাকেট বিড়ি মেলে। এর পরেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আড্ডা বন্ধ করতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি হয় ইংরেজবাজারের বালুরচর এলাকায়। এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে হেনস্থার দায়ে পুলিশ আটক করে এক ব্যক্তিকে। রায়গঞ্জে লাঠিপেটা হয়েছে বলে অভিযোগ।
পশ্চিম বর্ধমানের সীতারামপুর স্টেশন লাগোয়া এলাকায় কিছু ক্ষণের জন্য তৃণমূলের দলীয় অফিস খোলা হয়েছিল। তবে আসানসোল পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর অমিত তুলসীয়ান বলেন, ‘‘অফিস খোলা ঠিক হয়নি। কিছু ক্ষণ পরেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।’’ কাঁথি শহরের ক্যানাল পাড় থেকে নেতাজি মার্কেট পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আনাজ ও মাছের দোকান তুলে দেয় পুলিশ ও পুরসভার দল। হুগলি জেলার চটকলগুলি খোলা ছিল এ দিন। সেখানে দূরত্ব-বিধি মানা হয়নি বলেই অভিযোগ। মুর্শিদাবাদে বিধিভঙ্গের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ৬০ জনকে।
পুলিশ-প্রশাসনের একটি অংশের বক্তব্য, লোকজনের বাইরে বার হওয়ার প্রবণতা বন্ধ হওয়া জরুরি। তা না-হলে লকডাউন পুরো সফল করা মুশকিল। দিনের শেষে কোচবিহার শহরের এক বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘আমাদের এমনই অবস্থা যে, পুলিশের লাঠি না-পড়লে শিক্ষা হয় না। রবিবার দেখবেন, আবার লোকজন জমিয়ে মাছ, মাংস কিনতে বাজারে ভিড় করবে।’’